ঢাকা ০৭:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমতলীতে প্রায় ১০০টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

আমতলী (বরগুনা ) প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৭:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪ ৭৯ বার পড়া হয়েছে

বরগুনার আমতলী উপজেলায় ১০০টি লোহার সেতু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুগুলো ধসে আবার যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনসাধারণ। গত ২২শে জুন ২০২৪ উপজেলার হলদিয়া বাজার সংলগ্ন সেতু ধসে ৯ জনের প্রাণহানির পর আমতলী উপজেলা এলজিইডি নড়েচড়ে বসে। তারা ঝুঁকিপূর্র্ণ সেতুর দুই পাশে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড টাঙানো এবং সেতুর প্রবেশ মুখে বাঁশের বেড়া ও প্রতিবন্ধকতা খুঁটি স্থাপন করেছে।

লোহার সেতুগুলো নির্মাণের পর এসব সেতু রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় এরই মধ্যে ২০০৭ সালের সিডরের রাতে কেওয়াবুনিয়া খালের, ২০১৫ সালের ৮ই জুন আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী মুচল্লী বাড়ির খালের, ২০১৫ সালের ১৪ই মে সোনাখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের খালের, ২০১৬ সালের ১৬ই মে রোয়ানুর রাতে বাঁশবুনিয়া খালে, একই বছর ৯ই জুলাই আমড়াগাছিয়া খালের অন্তত ১৫টি সেতু অধিক জরাজীর্ণতার কারণে ধসে পড়ে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২২শে জুন শনিবার দুপুরে হলদিয়া বাজার সংলগ্ন সেতুটি মাইক্রোবাসসহ ধসে ৯ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এর বাইরে এখনো যে সেতুগুলো খালের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে সেগুলোও শতভাগ জরাজীর্ণ হয়ে চলাচলের অনুপযোগী অবস্থায় রয়েছে। ধসে পড়া সেতুগুলোর স্থানে এলাকার বাসিন্দারা উদ্যোগ নিয়ে বাঁশ, তক্তা, সুপারিগাছসহ অন্যান্য গাছ দিয়ে কোনো রকম মেরামত করে ঝুঁকি নিয়ে এসব সেতু পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও শিক্ষার্থীরা। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত ২২শে জুন ২০২৪ খ্রি. শনিবার হলদিয়া বাজার সংলগ্ন লোহার সেতু ধসের পর এখন পুরো ইউনিয়ন উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

উপজেলা সদরসহ ঢাকা কিংবা বরিশাল যেতে হলে এই সেতু পারাপার হয়ে ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের চলাচল করতে হয়। অপর দিকে হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের বাঁশবুনিয়া খালের জেবি সেনের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সেতুটি ২০১৬ সালের ১৬ই মে শনিবার বিকালে রোয়ানুর প্রভাবে মুষলধারে বৃষ্টির সময় কয়েকজন যাত্রীসহ সেতুটির মাঝ বরাবর ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যরে অংশ ধসে খালের পানিতে পড়ে যায়।

এসময় সেতু দিয়ে পারাপার হওয়া অনেক যাত্রী গুরুতর আহত হন। সেতুটি ধসে পড়ায় তক্তাবুনিয়া গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ ছাড়া সেতুর পশ্চিমপাড়ে জেবি সেনের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের পারাপারে মহাভোগান্তি দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী নিরুপায় হয়ে তাদের চলাচল ঠিক রাখার জন্য বর্তমানে সেতুর জায়গায় একটি তিন তক্তার ডিঙ্গি নৌকায় খেয়া পারাপার হিসেবে চালু করেছেন গ্রামের সাধারণ জনগণ। কুকুয়া ইউনিয়নের কেওয়াবুনিয়া খালের লোহার সেতুটি সিডরের সময় দুমড়ে মুছড়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখনো সংস্কার করা হয়নি। স্থানীয় শিক্ষক মোজাম্মেল হক জানান, সেতুর এক প্রান্তে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের চলাচলের সুবিধার জন্য বাঁশের সাঁকো দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করছে।

একই অবস্থা হলদিয়া ইউনিয়নের মোল্লাবাড়ি সংলগ্ন সেতুটি ধসে পড়ার পর স্থানীয়রা একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে পারাপার হচ্ছে। কাউনিয়া খালের সেতুটি ধসের পর সেখানে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে প্লাস্টিকের ড্রাম এবং কাঠ দিয়ে একটি ভাসমান সেতু তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এখানে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি ও কাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
গত ২২শে জুন শনিবার হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া বাজার সংলগ্ন সেতুটি ধসে ৯ জনের প্রাণহানির পর তারা ইতিমধ্যে উপজেলার ঝুঁকিপর্ণ সেতুর তালিকা তৈরি করে সেতুর প্রবেশ মুখে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড এবং খুঁটি বসিয়েছে। তালিকা অনুযায়ী দেখা যায়, হলদিয়া ইউনিয়নে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে ১৮টি, গুলিশাখালী ইউনিয়নে ২৫টি, আর পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে ৮টি, কুকুয়া ইউনিয়নে ৪টি, আমতলী সদর ইউনিয়নে ৮টি, আঠারগাছিয়া ইউনিয়নে ২১টি, চাওড়া ইউনিয়নে ১২টি এবং আমতলী পৌরসভায় ৪টিসহ মোট ১০০টি সেতু রয়েছে। উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ৯৯টি ঝুঁকিপূর্ণ লোহার সেতুর তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। যে সকল স্থানে লোহার সেতু রয়েছে তা অপসারণ করে গার্ডার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

আমতলীতে প্রায় ১০০টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

আপডেট সময় : ০৩:৩৭:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪

বরগুনার আমতলী উপজেলায় ১০০টি লোহার সেতু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুগুলো ধসে আবার যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনসাধারণ। গত ২২শে জুন ২০২৪ উপজেলার হলদিয়া বাজার সংলগ্ন সেতু ধসে ৯ জনের প্রাণহানির পর আমতলী উপজেলা এলজিইডি নড়েচড়ে বসে। তারা ঝুঁকিপূর্র্ণ সেতুর দুই পাশে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড টাঙানো এবং সেতুর প্রবেশ মুখে বাঁশের বেড়া ও প্রতিবন্ধকতা খুঁটি স্থাপন করেছে।

লোহার সেতুগুলো নির্মাণের পর এসব সেতু রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় এরই মধ্যে ২০০৭ সালের সিডরের রাতে কেওয়াবুনিয়া খালের, ২০১৫ সালের ৮ই জুন আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী মুচল্লী বাড়ির খালের, ২০১৫ সালের ১৪ই মে সোনাখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের খালের, ২০১৬ সালের ১৬ই মে রোয়ানুর রাতে বাঁশবুনিয়া খালে, একই বছর ৯ই জুলাই আমড়াগাছিয়া খালের অন্তত ১৫টি সেতু অধিক জরাজীর্ণতার কারণে ধসে পড়ে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২২শে জুন শনিবার দুপুরে হলদিয়া বাজার সংলগ্ন সেতুটি মাইক্রোবাসসহ ধসে ৯ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এর বাইরে এখনো যে সেতুগুলো খালের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে সেগুলোও শতভাগ জরাজীর্ণ হয়ে চলাচলের অনুপযোগী অবস্থায় রয়েছে। ধসে পড়া সেতুগুলোর স্থানে এলাকার বাসিন্দারা উদ্যোগ নিয়ে বাঁশ, তক্তা, সুপারিগাছসহ অন্যান্য গাছ দিয়ে কোনো রকম মেরামত করে ঝুঁকি নিয়ে এসব সেতু পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও শিক্ষার্থীরা। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত ২২শে জুন ২০২৪ খ্রি. শনিবার হলদিয়া বাজার সংলগ্ন লোহার সেতু ধসের পর এখন পুরো ইউনিয়ন উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

উপজেলা সদরসহ ঢাকা কিংবা বরিশাল যেতে হলে এই সেতু পারাপার হয়ে ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের চলাচল করতে হয়। অপর দিকে হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের বাঁশবুনিয়া খালের জেবি সেনের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সেতুটি ২০১৬ সালের ১৬ই মে শনিবার বিকালে রোয়ানুর প্রভাবে মুষলধারে বৃষ্টির সময় কয়েকজন যাত্রীসহ সেতুটির মাঝ বরাবর ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যরে অংশ ধসে খালের পানিতে পড়ে যায়।

এসময় সেতু দিয়ে পারাপার হওয়া অনেক যাত্রী গুরুতর আহত হন। সেতুটি ধসে পড়ায় তক্তাবুনিয়া গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ ছাড়া সেতুর পশ্চিমপাড়ে জেবি সেনের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের পারাপারে মহাভোগান্তি দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী নিরুপায় হয়ে তাদের চলাচল ঠিক রাখার জন্য বর্তমানে সেতুর জায়গায় একটি তিন তক্তার ডিঙ্গি নৌকায় খেয়া পারাপার হিসেবে চালু করেছেন গ্রামের সাধারণ জনগণ। কুকুয়া ইউনিয়নের কেওয়াবুনিয়া খালের লোহার সেতুটি সিডরের সময় দুমড়ে মুছড়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখনো সংস্কার করা হয়নি। স্থানীয় শিক্ষক মোজাম্মেল হক জানান, সেতুর এক প্রান্তে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের চলাচলের সুবিধার জন্য বাঁশের সাঁকো দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করছে।

একই অবস্থা হলদিয়া ইউনিয়নের মোল্লাবাড়ি সংলগ্ন সেতুটি ধসে পড়ার পর স্থানীয়রা একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে পারাপার হচ্ছে। কাউনিয়া খালের সেতুটি ধসের পর সেখানে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে প্লাস্টিকের ড্রাম এবং কাঠ দিয়ে একটি ভাসমান সেতু তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এখানে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি ও কাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
গত ২২শে জুন শনিবার হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া বাজার সংলগ্ন সেতুটি ধসে ৯ জনের প্রাণহানির পর তারা ইতিমধ্যে উপজেলার ঝুঁকিপর্ণ সেতুর তালিকা তৈরি করে সেতুর প্রবেশ মুখে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড এবং খুঁটি বসিয়েছে। তালিকা অনুযায়ী দেখা যায়, হলদিয়া ইউনিয়নে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে ১৮টি, গুলিশাখালী ইউনিয়নে ২৫টি, আর পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে ৮টি, কুকুয়া ইউনিয়নে ৪টি, আমতলী সদর ইউনিয়নে ৮টি, আঠারগাছিয়া ইউনিয়নে ২১টি, চাওড়া ইউনিয়নে ১২টি এবং আমতলী পৌরসভায় ৪টিসহ মোট ১০০টি সেতু রয়েছে। উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ৯৯টি ঝুঁকিপূর্ণ লোহার সেতুর তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। যে সকল স্থানে লোহার সেতু রয়েছে তা অপসারণ করে গার্ডার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।