ঢাকা ০২:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের উরস শরীফ শুরু হচ্ছে আজ

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট সময় : ০১:৫৬:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ৯৩ বার পড়া হয়েছে

ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার আটরশির বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে বিশ্ব উরস শরীফ শুরু হচ্ছে আজ। নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর, গ্রাম জুড়ে ফসলে ঘেরা সবুজ মাঠ, খাল-বিলে ভরা অপরূপ গ্রাম আটরশি।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠাতা শাহসূফী হযরত মাওলানা খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ) ছাহেব ১৯৪৮ সালে সভ্যতা ও আধুনিক জীবন যাত্রার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত অজপাড়া গাঁয়ে পর্দাপণ করেন । একটি ছোট কুঁড়েঘর থেকে শুরু করেন তরিকা প্রচার। ঘরটি “জাকের ক্যাম্প” নামে পরিচিত ছিলো যা এখন বিশ্ব জাকের মঞ্জিল নামে সারা বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে ।
শাহসূফী হযরত মাওলানা খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ) ছাহেবের পীর ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সূফি সাধক হযরত খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রহঃ) ছাহেব। হযরত এনায়েতপুরী (রহঃ) ছাহেব ১৯৫২ সালে ওফাত লাভ করেন। তারপর খেকেই বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরীফে মহা পবিত্র উরস শরীফ উদযাপিত হয়। দরবারের একজন আলেমের সাথে উরস শরীফ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে দিবসে সাধকের পুণ্যাত্মার সাথে বিশ্ব আত্মার সহিত মিলিত হয়, সেই দিবসে তাঁহার পবিত্র রূহে ছওয়াব রেছানীর উদ্দেশ্যে যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি উদযাপন করা হয়-তাহা “উরস” নামে খ্যাত। ইহা অত্যন্ত বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ অনুষ্ঠান। উরস শরীফ বিশ্ব মানবের জন্য কল্যাণকর এক পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
তিনি বলেন, মহা পবিত্র উরস শরীফে কুরআন হাদীসের আলোকে ওয়াজ নসিহত, শরীয়তের তাৎপর্য ও গুরত্ব ব্যাখ্যা, খোদাপ্রাপ্তিতত্ত্বজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কীয় আলোচনা, খোদাপ্রাপ্তিতত্ত্বজ্ঞান চর্চা অর্থাৎ জেকের, রাবেতা, মোরাকাবা, শোগল ও মোহাছাবা, বিভিন্ন প্রকারের ফয়েজ খেয়াল করা হয়। শরিয়তে খেলাপ কোন কাজ এখানে করা হয় না। বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে প্রতিদিন মানুষ আসে তবে বছরের একটা সময় মহা পবিত্র উরস শরীফে মানুষের ঢল নামে। এত মানুষের ঢল ইতি পূর্বে কেউ দেখেনি। বাঁধ ভাঙ্গা মানুষের ঢল। মানুষ এখানে আসে শান্তির খোঁজে, আল্লাহ ও রাসূলকে পাওয়ার উদ্দেশে, ইহকাল ও পরকালের মুক্তির আশায়।
তিনি আরোও বলেন, রোগ, জরা, দুঃখ-দারিদ্র, অভাব-অনটন বিপর্যস্থ ও হতাশাগ্রস্থ মানুষ শান্তি ও আশ্বাসের আশায় ছুটে আসে দলে দলে, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আজ এক তীর্থক্ষেত্র, মানব সম্মিলনের এক পবিত্র ভূমি।
উরস শরীফে আগত লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ, মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান অভ্যাগত অতিথিদের জন্য আলাদা বিশ্রামের ব্যবস্থা, জরুরী চিকিৎসা সেবা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ইবাদতের জন্য সুবিশাল অজুখানাসহ সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে । সুবিশাল খাবারের মাঠে ধনী-দরিদ্র, উচু-নিচু এক সাথে বসে খাবার গ্রহন করে। এখানে নেই হিংসা, নেই দ্বেষ। নেই পাপ- পংকিলতা। সবাই পরস্পরের ভাই। সবার মুখে তৌহিদের বানী, চোখে রাসূল (সাঃ) এঁর মহব্বতের অশ্রু।
রাত ৩টায় পবিত্র কোরআন মাজিদ তোলেয়াতের মাধ্যমে সারাদিনের কর্মকান্ড শুরু হয়। প্রতি ওয়াক্ত নামাজ লক্ষ লক্ষ মুসল্লি কাতারবন্দি হয়ে জামাতের সাথে আদায় করে এ যেন এক অভাবনীয় দৃশ্য। নামাজান্তে তরিকায়ে নক্সবন্দীয়া-মুজাদ্দেদীয়ার নিয়মনুসারে অজিফা আদায় করা হয়। গজলের তালে তালে লক্ষ লক্ষ মানুষ মহাধুমধামে আল্লাহর জেকের করে। মহা পবিত্র উরস শরীফ চলাকালিন সময়ে শাহসূফী হযরত মাওলানা খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ) ছাহেবের স্থলাভিষিক্ত জাকেরানদের ইমাম বড় ছাহেবজাদা আগত জাকেরানদের সাথে স্বাক্ষাত করেন, নসিহত ও উপদেশ দান করেন।
আজ ১৭ ফেব্রুয়ারী থেকে ২০ ই ফেব্রুয়ারী মহা পবিত্র উরস শরীফ বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত হবে। ২০ ই ফেব্রুয়ারী রোজ মঙ্গলবার শাহসূফী হযরত মাওলানা খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ) ছাহেবের পবিত্র রওজা শরীফ জেয়ারত করে আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে মহা পবিত্র উরস শরীফ সমাপ্ত হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের উরস শরীফ শুরু হচ্ছে আজ

আপডেট সময় : ০১:৫৬:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার আটরশির বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে বিশ্ব উরস শরীফ শুরু হচ্ছে আজ। নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর, গ্রাম জুড়ে ফসলে ঘেরা সবুজ মাঠ, খাল-বিলে ভরা অপরূপ গ্রাম আটরশি।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠাতা শাহসূফী হযরত মাওলানা খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ) ছাহেব ১৯৪৮ সালে সভ্যতা ও আধুনিক জীবন যাত্রার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত অজপাড়া গাঁয়ে পর্দাপণ করেন । একটি ছোট কুঁড়েঘর থেকে শুরু করেন তরিকা প্রচার। ঘরটি “জাকের ক্যাম্প” নামে পরিচিত ছিলো যা এখন বিশ্ব জাকের মঞ্জিল নামে সারা বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে ।
শাহসূফী হযরত মাওলানা খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ) ছাহেবের পীর ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সূফি সাধক হযরত খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রহঃ) ছাহেব। হযরত এনায়েতপুরী (রহঃ) ছাহেব ১৯৫২ সালে ওফাত লাভ করেন। তারপর খেকেই বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরীফে মহা পবিত্র উরস শরীফ উদযাপিত হয়। দরবারের একজন আলেমের সাথে উরস শরীফ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে দিবসে সাধকের পুণ্যাত্মার সাথে বিশ্ব আত্মার সহিত মিলিত হয়, সেই দিবসে তাঁহার পবিত্র রূহে ছওয়াব রেছানীর উদ্দেশ্যে যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি উদযাপন করা হয়-তাহা “উরস” নামে খ্যাত। ইহা অত্যন্ত বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ অনুষ্ঠান। উরস শরীফ বিশ্ব মানবের জন্য কল্যাণকর এক পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
তিনি বলেন, মহা পবিত্র উরস শরীফে কুরআন হাদীসের আলোকে ওয়াজ নসিহত, শরীয়তের তাৎপর্য ও গুরত্ব ব্যাখ্যা, খোদাপ্রাপ্তিতত্ত্বজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কীয় আলোচনা, খোদাপ্রাপ্তিতত্ত্বজ্ঞান চর্চা অর্থাৎ জেকের, রাবেতা, মোরাকাবা, শোগল ও মোহাছাবা, বিভিন্ন প্রকারের ফয়েজ খেয়াল করা হয়। শরিয়তে খেলাপ কোন কাজ এখানে করা হয় না। বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে প্রতিদিন মানুষ আসে তবে বছরের একটা সময় মহা পবিত্র উরস শরীফে মানুষের ঢল নামে। এত মানুষের ঢল ইতি পূর্বে কেউ দেখেনি। বাঁধ ভাঙ্গা মানুষের ঢল। মানুষ এখানে আসে শান্তির খোঁজে, আল্লাহ ও রাসূলকে পাওয়ার উদ্দেশে, ইহকাল ও পরকালের মুক্তির আশায়।
তিনি আরোও বলেন, রোগ, জরা, দুঃখ-দারিদ্র, অভাব-অনটন বিপর্যস্থ ও হতাশাগ্রস্থ মানুষ শান্তি ও আশ্বাসের আশায় ছুটে আসে দলে দলে, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আজ এক তীর্থক্ষেত্র, মানব সম্মিলনের এক পবিত্র ভূমি।
উরস শরীফে আগত লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ, মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান অভ্যাগত অতিথিদের জন্য আলাদা বিশ্রামের ব্যবস্থা, জরুরী চিকিৎসা সেবা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ইবাদতের জন্য সুবিশাল অজুখানাসহ সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে । সুবিশাল খাবারের মাঠে ধনী-দরিদ্র, উচু-নিচু এক সাথে বসে খাবার গ্রহন করে। এখানে নেই হিংসা, নেই দ্বেষ। নেই পাপ- পংকিলতা। সবাই পরস্পরের ভাই। সবার মুখে তৌহিদের বানী, চোখে রাসূল (সাঃ) এঁর মহব্বতের অশ্রু।
রাত ৩টায় পবিত্র কোরআন মাজিদ তোলেয়াতের মাধ্যমে সারাদিনের কর্মকান্ড শুরু হয়। প্রতি ওয়াক্ত নামাজ লক্ষ লক্ষ মুসল্লি কাতারবন্দি হয়ে জামাতের সাথে আদায় করে এ যেন এক অভাবনীয় দৃশ্য। নামাজান্তে তরিকায়ে নক্সবন্দীয়া-মুজাদ্দেদীয়ার নিয়মনুসারে অজিফা আদায় করা হয়। গজলের তালে তালে লক্ষ লক্ষ মানুষ মহাধুমধামে আল্লাহর জেকের করে। মহা পবিত্র উরস শরীফ চলাকালিন সময়ে শাহসূফী হযরত মাওলানা খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ) ছাহেবের স্থলাভিষিক্ত জাকেরানদের ইমাম বড় ছাহেবজাদা আগত জাকেরানদের সাথে স্বাক্ষাত করেন, নসিহত ও উপদেশ দান করেন।
আজ ১৭ ফেব্রুয়ারী থেকে ২০ ই ফেব্রুয়ারী মহা পবিত্র উরস শরীফ বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত হবে। ২০ ই ফেব্রুয়ারী রোজ মঙ্গলবার শাহসূফী হযরত মাওলানা খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ) ছাহেবের পবিত্র রওজা শরীফ জেয়ারত করে আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে মহা পবিত্র উরস শরীফ সমাপ্ত হবে।